Press Release

বিশ্ব পরিবেশ দিবস

Only one Earth: Leaving sustainably in Harmony with Nature

(একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন)

একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন - বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২ এর এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আরণ্যক ফাউন্ডেশন ০৮ই জুন ২০২২ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে 'Priorities of forest Landscape Restoration and biodiversity conservation in the Chittagong Hill tracts'- শিরোনামের একটি সেমিনার আয়োজন করে। সেমিনারের মূল প্রবন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও অবক্ষয়িত বন নিয়ে আলোচনা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম কয়েক দশক আগেও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের প্রথাগত চাষাবাদ পদ্ধতি যা জুম চাষ হিসেবে পরিচিত তার আবর্তকাল ২০ বছর থেকে ৫ বছরে নেমে আসাতে জুম চাষ আর টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারছে না। অনেকে জুম চাষের জমিতে কলা, আম, আনারস, হলুদ, আদা, কাজুবাদাম, কফি ও অন্যান্য ফলের বাগান করছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ জুম চাষে আগ্রহী না হয়ে ফলের বাগানে বেশি আগ্রহী হতে দেখা যায়। জুম চাষের আবর্ত কাল কমে যাওয়াতে মাটির উর্বরা শক্তিও কমে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয়রা জুম চাষের নতুন জমির সন্ধানে ছুটছে। তারা অশ্রেণীভুক্ত বনসহ বন বিভাগের রিজার্ভ ফরেস্টে বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে যে, রাইংখ্যং ছড়ি সংরক্ষিত বনের ফারুয়া নামক স্থানে প্রায় ৩০০০ পরিবার বসতিস্থাপন করেছে যেখানে জনসংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি। সরকার সে স্থানকে ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনের ভিতরে এখন শুধু বসতি নয়, ইউনিয়ন পরিষদও স্থাপন হয়েছে। এভাবে বনের জমি কৃষি জমিতে রূপান্তর হতে থাকলে বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ বনের প্রতিবেশ সেবা সম্পূর্ণরূপে ব্যহত হবে। এটি টেকসই কোন ভুমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নয়। শুধু জুম চাষকে দায়ী করা যথার্থ নয়। জুম চাষের পাশাপাশি উন্নয়নের জন্য সড়ক ও অন্যান্য স্থাপনা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভিন্ন ফল ও কফি উৎপাদনের উৎকৃষ্ট স্থান মনে করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ফলের চারা বিতরণ করে তা লাগানোর জন্য উৎসাহিত করছে। স্থানীয়রা পাহাড়ের গাছপালা কেটে সেখানে দেশি বিদেশী ফলের গাছ লাগাচ্ছে। এক ধরণের লোভী ব্যবসায়ীরা ঝিরির পাথর উত্তোলন করে পানির প্রবাহ ও পানি ভূগর্ভে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বাঁশ জন্মাতো এবং কর্ণফুলি পেপার মিলস্ সে বাঁশ কিনে নিতো। কিন্তু বর্তমানে কাগজ উৎপাদন বন্ধ হওয়াতে বাঁশ আর বিক্রি হয় না। ফলে বাঁশ ঝাড় কেটে সেখানে জুম চাষ করছে। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বনের প্রতিবেশ সেবা থেকে স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা খুব বেশি রকমের ব্যহত হবে। তাই প্রতিবেশ সেবা পুনরুদ্ধারে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন ফরেস্ট লেন্ডস্কেপ রেস্টোরেশন বা স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় বন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার। এলাকার সঠিক অবস্থা নিরূপণ করে যেখানে বন বা গাছপালা খুব বেশি রকমের অবক্ষয় হয়েছে সেখানে জনগণের জন্য উপকারি গাছপালা ও গুল্ম, লতাজাতীয় গাছ লাগিয়ে ভুমি ক্ষয় রোধ করে ভুমির উর্বরা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ভুমির ব্যবহার চিহ্নিত করে ফসলের জমি, ফল গাছের জন্য জমি এবং বন ও বন্যপ্রাণীর জন্য জমি নির্ধারণ করে সেখানে প্রত্যেক সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিতে হবে যা স্থানীয়দের জীবন-জীবিকায় সহায়ক হয়। 

আরণ্যক ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে একটি স্টাডি হাতে নিয়েছে। রাইংখ্যং রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনের বর্তমান অবস্থা নিরুপণ করে সেখানে বসবাসকারি জনগোষ্ঠী ও এর চারপাশে যারা বাস করছে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সব স্টেকহোল্ডারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে। এ কাজটি করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রীন কর্মসূচি সহায়তা প্রদান করছে। তাছাড়া, বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের একটি পাইলট প্রকল্পও আরণ্যক বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের শিক্ষণ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে সেমিনারে অভিমত প্রকাশ করা হয়। 

আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রেস্টোরেশন স্পেশালিস্ট  ড. মহাঃ আব্দুল কুদ্দুস। আলোচক হিসেবে উপস্থিত  ছিলেন জনাব ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান  বন সংরক্ষক ও সভাপতি ইনস্টিটিউশন অফ  ফরেস্টার্স, বাংলাদেশ। আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন  জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক, ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ; এফএও বাংলাদেশ এর এনভারমেন্ট , ফরেস্ট এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ ইউনিটএর টিম লিডার ড. ক্রিস্টেফার জনসন এবং বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সিনিয়র এনভারমেন্টাল স্পেশালিস্ট ড. ইশতিয়াক সোবহান।

পরিবেশ, বন ও  জলবায়ু  পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর সম্মানিত অতিরিক্ত সচিব জনাব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ, এবং জনাব আমির হোসেন চৌধুরী, প্রধান বন সংরক্ষক। 

বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন +৮৮০১৮১৩৫১৮৬৬৭।

তারিখ: 07 AUG 2022

ইসরাত জাহান ইমা

লিঁয়াজো অফিসার 

আরণ্যক ফাউন্ডেশন

ema@arannayk.org